ট্র্যাফিক লাইট সিস্টেম কি? কিভাবে এটা কাজ করে।(What is TLS & How it's work in RMG Sector)
ট্র্যাফিক লাইট সিস্টেম কি?
নিডেল পয়েন্ট বা উৎস থেকে ত্রুটিযুক্ত পণ্যের উৎপাদন হ্রাস করার জন্য ট্র্যাফিক লাইট সিস্টেমটি সবচেয়ে কার্যকর পরিদর্শন (Inspection) হাতিয়ার বা সিস্টেম।
এটি একটি এলোমেলো বা র্যান্ডোম পরিদর্শন (Inspection) ব্যবস্থা। ট্র্যাফিক লাইট সিস্টেমটি ভিজ্যুয়ালি যোগাযোগের কারণে অন্যান্য কোয়ালিটি টুলস এর চেয়ে এটি সুইং ফ্লোরের মান (Quality) নিয়ন্ত্রণে বেশী কার্যকর হাতিয়ার বা পন্থা হিসাবে বিবেচ্য। এটি একই সাথে কোয়ালিটি বজায় রেখে অপারেটরদের কর্মক্ষমতা/কর্মদক্ষতার স্তর বা লেভেল পরিমাপ করে। কোনও অপারেটর নিজেকে কখনো নিম্নমানের বা খারাপ কারিগর (Operator) হিসাবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করে না। ট্র্যাফিক লাইট সিস্টেম ব্যবস্থা তাদের পোশাক সেলাইয়ের সময় পোশাকের মান বা কোয়ালিটি ঠিক রাখার দিকে মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে।
ইন-লাইন চেকিং সিস্টেম অপারেটরদেরকে তাদের কাজের প্রতি মনোনিবেশ করার বিষয়ে সতর্ক করে এবং তার ফলে কম সংখ্যক ত্রুটিযুক্ত কাজ তৈরি হয় এবং সেটি ঠিক করার ক্ষেত্রে কম সময় নষ্ট হয়, এতে করে কোয়ালিটি with প্রোডাক্টিভিটির ব্যালেন্স ঠিক থাকে। তাছাড়া এটি অন্যান্য আরও অনেক উপায়েও কোয়ালিটি ঠিক রাখার ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে। যেমনঃ কাজের শুরুতে কোনও অপারেটর যদি প্রোডাক্ট স্পেসিফিকেশন বুঝতে না পারে, তবে ট্র্যাফিক লাইট সিস্টেম ব্যবস্থাপনায় মান পরিদর্শক (Roving QC) আলোচনার মাধ্যমে অপারেটরকে মানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পরিষ্কার করে দেবে বা কি ধরণের কোয়ালিটি দরকার সেটির মকাপ (Mock-up) ব্যবহারের মাধ্যমে হাতে কলমে শিখিয়ে দেবে। ট্র্যাফিক লাইট সিস্টেমটি উত্স বা নিডেল পয়েন্ট থেকে সমস্যাটিকে খুঁজে বের করার করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং সমস্ত সম্ভাব্য ত্রুটিযুক্ত পণ্যটি উত্পাদন অব্যাহত রাখার চেয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে সংশোধনমূলক পদক্ষেপে নেবার পদ্ধতিকে ট্র্যাফিক লাইট সিস্টেম বলে ।
এক কথায় প্রসেস কোয়ালিটি কন্ট্রোল করার জন্য করার জন্য সুইং ফ্লোরে যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তাকে ট্র্যাফিক লাইট সিস্টেম বলে ।
কিভাবে এটা কাজ করে:
ট্র্যাফিক লাইট সিস্টেমটি সুইং লাইনের মানের বা কোয়ালিটির সমস্যাগুলি হাইলাইট করার জন্য একটি ভিজ্যুয়াল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। ট্র্যাফিক লাইট কোয়ালিটি সিস্টেম মুলত ট্রান্সপোর্ট ট্র্যাফিক লাইট সিস্টেমের মতই কাজ করে থাকে। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি অপারেটরের মেশিনে তিনটি আলাদা রঙের কার্ড ব্যবহার করা হয়। সবুজ কার্ড ইঙ্গিত দেয় কোয়ালিটি গ্রাহকদের বা বায়ায়ের স্ট্যান্ডার্ডের সাথে মিট করছে। হলুদ কার্ড ইঙ্গিত দেয় একটি ছোটখাটো বা সামান্য ত্রুটি পাওয়া গেছে এবং সতর্কতা প্রয়োজন। লাল কার্ড ইঙ্গিত করে যে কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড গ্রাহকদের স্ট্যান্ডার্ড একদমই পূরণ করছে না বা যায় না ।
ট্রাফিক লাইট এমন একটি বিশেষ সিস্টেম যা পোষাক সেলাই ও আন্যান্য কোয়ালিটির উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এটা কোয়ালিটি ও প্রোডাকশন উভয় ডিপার্টমেন্ট দ্ধারাই পরিচালিত হয়ে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই কাজের জন্য এলইডি লাইট ব্যবহার করা হয়, তবে কম বাজেটের মধ্যে করতে চাইলে বিভিন্ন কালারের কার্ড ব্যবহার করে এটি করা যায়। নিম্নে সংক্ষেপে এগুলোর একটু ধারণা দেওয়া দেওয়া হলঃ
১.Green Colour- গ্রিন কালার:-
এর মানে হল সব কিছু ঠিক আছে। রোমিং কিউসি রেনডমলি ৫ পিস/ ৭ পিস অথবা ১০ পিস চেক করবে (গুরুত্বপূর্ণ প্রসেসের জন্য প্রতি ঘন্টায় একবার, ২ বার অথবা ৪ বার যা প্রসেসের উপর নির্ভর করে)। এই চেকে যদি কোন সমস্যা না পাওয়া যায়, তাহলে গ্রিন ট্রাফিক লাইট দেওয়া হবে। যার মানে হল এই প্রসেসের কোয়ালিটি সন্তোষজনক।
২.Yellow Colour- ইয়েলো কালার:-
এর মানে হল সতর্ক করা। রোমিং কিউসি যদি ৫ পিস/ ৭ পিস অথবা ১০ পিস চেক করে যদি কোন ডিফেক্ট পায় তাহলে মেশিনে ইয়েলো লাইট জ্বালিয়ে দিবেন এবং সংশ্লিষ্ট লাইন চীফ ও সোপারভাইজারকে অবহিত করবেন। রোমিং কিউসি পরবর্তী ফালোআপ অডিট এর টাইম লিমিট দিয়ে যাবেন।
৩. Red Colour-রেড কালার:-
এর মানে হচ্ছে মেশিন বন্ধ করা হয়েছে। হলুদ লাইট দিয়ে সতর্ক করার পর যদি ফলোআপ অডিট এ আবার কোন সমস্যা পাওয়া যায় তাহলে রোমিং কিউসি মেশিনে লাল লাইট জ্বালাবেন। লাল লাইট জ্বালানোর মানে এই মেশিন চালানো যাবে না। এমতবস্থায় সংশ্লিষ্ট প্রোডাকশন ও কোয়ালিটি ইনচার্জরা অপারেটর এর জন্য ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করবেন।
সাধারণত নিমোক্ত ৩ টি লাইট সচারাচার দেখা যায় না। তবে অনেক হাই প্রোফাইল কোম্পানীগুলোতে মাঝে মাঝে দেখা যায়।
7 Pieces Traffic light follow-up system:
• 7 Pieces বা TLS Audit করার সময় আমাদের ৬ টি Point বিশেষ ভাবে Follow করতে হবে
1.Sewing Allowance
2.Garments Cut Mark
3.SPI/SPCM
4.Thread Count
5.Unven/Point Up-down
6.No Serging
• প্রতিদিন ৫ বার অডিট করতে হবে, যদি ডিউটি ৮-৭ টা পর্যন্ত হয়, ৮-৫ টা পর্যন্ত হলে ৪ বার অডিট করতে হবে।
• ৮-১০ টা পর্যন্ত প্রথম অডিট সম্পন্ন করতে হবে, এক্ষেত্রে সবগুলো মেশিন অডিট করতে হবে। প্রথম অডিটের সময় এক/একের অধিক ডিফেক্ট পাওয়া গেলেও সরাসরি রেড/লাল কার্ড না দিয়ে ইয়োলো/হলুদ কার্ড দিয়ে অবজারবেশানে রাখতে হবে। অবজারবেশানে রাখা মেশিনগুলো পরের অডিটে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে চেকপূর্বক যদি এক/একের অধিক ডিফেক্ট পাওয়া যায় তবে রেড/লাল কার্ড দিয়ে মেশিন বন্ধ করে দিতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের (Production, Quality, Maintenance, IE, QA Executive) সাথে Root Cause Analysis এর মাধ্যমে সমাধানপূর্বক মেশিন চালু করতে হবে কিন্তু সেইক্ষেত্রে-ইয়োলো/হলুদ কার্ড প্রদান করতে হবে Operator কে অবজারবেশানে রাখার জন্য। অন্যথায় গ্রীন/সবুজ কার্ড প্রদান করতে হবে যদি কোন ডিফেক্ট পাওয়া না যায়।
• অবজারবেশানে রাখা মেশিনগুলো অবশ্যই ইয়োলো/হলুদ কার্ড দেবার ৩০ মিনিট (যত তাড়াতাড়ি সম্ভব) পরে পুনরায় একবার চেক করতে হবে কোয়ালিটি ঠিক আছে কিনা তা দেখার জন্য।
• ১০-১২ টা পর্যন্ত ২য় অডিট সম্পন্ন করতে হবে, এক্ষেত্রে সিলেক্টেড ক্রিটিকাল প্রসেসের মেশিনগুলো অডিট করতে হবে।
• এভাবে পর্যায়ক্রমে ১২-৩ টা, ৩-৫ টা, ৫-৭ টা পর্যন্ত ৩য়, ৪র্থ, ৫ম অডিট সম্পন্ন করতে হবে,সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র সিলেক্টেড ক্রিটিকাল প্রসেসের মেশিনগুলোই অডিট করতে হবে।
• সাত পিছ করে গার্মেন্টস চেক করতে হবে সাত পিছে একপিছ অল্টার বা ডিফেক্টস পাওয়া গেলে ইয়োলো/হলুদ কার্ড দিতে হবে।
• প্রথম অডিট ব্যাতিত সাত পিছ গার্মেন্টস চেক করে যদি একপিছের অধিক অল্টার বা ডিফেক্টস পাওয়া যায় তাহলে রেড/লাল কার্ড দিতে হবে। তবে উল্লেখ থাকে যে ১ম অডিটে গ্রীন/সবুজ কার্ড প্রদান করা হলে ২য় অডিটে সরাসরি রেড/লাল কার্ড না দিয়ে ইয়োলো/হলুদ কার্ড দিতে হবে, আর যদি ১ম অডিটেই ইয়োলো/হলুদ কার্ড প্রদান করা হলে ২য় অডিটে সরাসরি রেড কার্ড প্রদান করতে হবে।
• ডিফেক্ট কোড অনুযায়ী D. CODE ঘরে ডিফেক্ট কোড লিখতে হবে।
• D. QTY ঘরে সাত পিছ গার্মেন্টস চেক করে কত পিছ ডিফেক্ট পাওয়া গেছে তার কোয়ানটিটি লিখতে হবে।
• প্রত্যেক ডিফেক্ট হওয়ার পিছনে কোন জিনিসটি দায়ী তা 4M (Man, Machine, Materials, Method) মেথড অনুযায়ী বিশ্লেষণপূর্বক Man, Machine, Materials, Method এর ঘরে ডিফেক্ট কারণ অনুযায়ী অডিট ক্রমানুসারে যেমনঃ ১,২,৩,৪,৫ পর্যায়ক্রমে আলাদা আলাদা ঘরে টিক চিহ্ন দিয়ে মার্কিং করতে হবে।
At a glance বা সংক্ষেপে গ্রীন, ইয়োলো, রেড কার্ড দেবার নিয়মাবলিঃ
• ১ম বার ইন্সপেকশানে অল্টার পাওয়া গেলে – ইয়োলো/হলুদ কার্ড দিতে হবে, না পেলে – গ্রীন/সবুজ কার্ড দিতে হবে।
• ২য় বার ইন্সপেকশানে অল্টার পাওয়া না গেলে – গ্রীন/সবুজ কার্ড দিতে হবে, পেলে – রেড/লাল কার্ড দিতে হবে।
• ৩য় বার ইন্সপেকশানে অল্টার পাওয়া গেলে – ইয়োলো/হলুদ কার্ড দিতে হবে, না পেলে – গ্রীন/সবুজ কার্ড দিতে হবে।
• ৪র্থ বার ইন্সপেকশানে অল্টার পাওয়া গেলে – রেড/লাল কার্ড দিতে হবে, না পেলে – গ্রীন/সবুজ কার্ড দিতে হবে।
• রেড কার্ড দেবার পরে মেশিন বন্ধ করে দিতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের (Production, Quality, Maintenance, IE, QA Executive) সাথে Root Cause Analysis এর মাধ্যমে সমাধানপূর্বক মেশিন চালু করতে হবে কিন্তু সেইক্ষেত্রে-ইয়োলো/হলুদ কার্ড প্রদান করতে হবে Operator কে অবজারবেশানে রাখার জন্য।
No comments